গর্ভবতী মায়ের জন্য কিসমিস খাওয়ার বিশেষ উপকারীতা
গর্ভবতী মায়ের জন্য কিসমিস খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে আমরা আজকে আলোচনা করবো।কিসমিস খাওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য কতটুকু নিরাপদ? কিসমিসে কি কি ভিটামিন রয়েছে
গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে অনেকেই অনেক রকম ধারনা করে থাকেন। সাধারান একটি খাবার খেতে গেলেও তারা ২-৩ বার ভাবেন যে, খাবারটি খাওয়া কি তার নিজের জন্য এবং বাচ্চার জন্য স্বাথ্যকর হবে? এরকম অনেক খাবার নিয়েই গর্ভাবস্থায় চিন্তিত থাকেন। আজকে এরকমই একটি পুষ্টিকর খাবার কিসমিস নিয়ে আলোচনা করবো। যেটি মা এবং শিশু দুজনকেই অনেকগুলো রোগব্যাধি এবং সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে।
পেজ সূচিপত্র
গর্ভবতী মায়ের জন্য কিসমিস খাওয়ার যাদুকরী কয়েকটি উপকার আলোচনা
গর্ভবতী মায়ের জন্য কিসমিস খাওয়ার যাদুকরী কয়েকটি উপকার আলোচনা
কিসমিস এর উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না।কিসমিসে ভিটামিন,খনিজ,পলিফেনলস সহ কয়েকটি ফাইবার রয়েছে। কিসমিস শরীরে শক্তি যোগান দেয়। আবার কিসমিস শরীরে রক্ত উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখেঃ গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ এর সমস্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কিসমিসে ভিটামিন এবং খনিজগুলোর সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকায় আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ঘুম ভালো হয়ঃ গর্ভাবস্থায় মায়েদের ঘুম নিয়ে অধিক সমস্যা হয়। ঘুম ভালো না হলে শারীরিক অসুস্থতার পাশা-পাশি মানসিক অসুস্থতার সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে যাদুকরী ভূমিকা পালন করে কিসমিস। কিসমিসে যে আয়রন রয়েছে এটি ঘুমে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমান গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হয়। প্রতিদিন কিসমিস সেবনে পেট ভালো থাকে এবং গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা কম হয়।
চুল পড়া কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় চুল পড়া অন্যান্য সমস্যার চেয়ে কম কিছু না। কিসমিসে রয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমনঃ আয়রন,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম। যা আপনার চুল এবং ত্বকে উজ্জ্বল রাখে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা বাচ্চার উপর কেমন প্রভাব ফেলে
গর্ভাবস্থায় মা যখন কিসমিস সেবন করবে মা এবং শিশু দুইজন এর উপরই এটির প্রভাব ফেলবে। যেমন অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়ঃ ওজন স্বাভাবিক এর চেয়ে কম হয়, জন্মগত ক্রুটি হয়, নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম হওয়া এসব কমায় সঠিক খাবার এবং সঠিকভাবে চলাফেরা। কিসমিস কিন্তু সেসব খাবার এর তালিকায় সীমাবদ্ধ।
গর্ভবতী মায়ের জন্য কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভবতী মায়ের জন্য কিসমিস খাওয়ার যেমন উপকার রয়েছে তেমনি কিছু ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। অতিরিক্ত কিসমিস সেবনের ক্ষতিকর দিক গুলো হলো- কিসমিসে থাকা ফাইবার অতিরিক্ত সেবনের ফলে বদহজম,ডায়রিয়া, পেটফাঁপা, অন্যান্য হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।শুধু কিসমিস নয় যেকোনো খাবার ই প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেবন করলে সেটি স্বাথ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্যালসিয়াম এর উপকারিতা
গর্ভবতী মায়ের জন্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ২টি কারনে খুব গুরুত্বপূর্ণ।প্রথমত গর্ভের শিশুর হাড় গুলো মজবুত করার জন্য।দাঁত শক্ত করার জন্য ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত মায়ের ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক রাখার জন্য।যাদের আগে কখনো ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ নিয়ে সমস্যা হয়নি কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটি বেড়ে যায়। ব্লাড প্রেশার বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন রোগেরও দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য দুধ খাওয়ার উপাকারিতা
খাবার এর মধ্যে ক্যালসিয়াম এর সব চেয়ে ভালো উৎস হলো দুধ।গর্ভাবস্থায় কতটুকু দুধ খেলে সঠিক শরীরের চাহিদা পূরন হবে-গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৩ কাপ দুধ সেবনে সঠিক পুষ্টি পাওয়া সম্ভব। যারা দুধ খেতে পারেন না তার বিকল্প হিসেবে টক দই খেতে পারেন।
এছাড়াও শাক,কাঠবাদাম এসব সেবনের মাধ্যমেও ক্যালিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করতে পারেন।গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম এতো বেশি গুরুত্বপূর্ন যে - গর্ভবতী মায়ের ৩ মাস পর থেকে এমনি তেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবনের প্রয়োজন হয় এবং সেটি ডাক্তার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
গর্ভাবস্থায় শাক খাওয়ার উপাকারিতা
গর্ভাবস্থায় শাক খাওয়ার ২ টি কারন নিয়ে আলোচনা করা হলো- প্রথমত শাকে প্রচুর পরিমান ফুলেট ও আয়রন থাকে। মায়ের গর্ভে শিশুর যে ব্রেইন তৈরী হয়,মেরুদন্ড তৈরী হয় এসব সঠিক ভাবে তৈরি হওয়ার জন্য ফুলেট প্রয়োজন।
আবার এই ফুলেট এর অভাব হলে নানান ধরনের জন্মগত ক্রুটি হতে পারে। মায়ের শরীরে নতুন রক্ত তৈরী করতে আয়রন প্রয়োজন হয়। আয়রন এর অভাবে রক্তসল্পতা হতে পারে,শিশুর ওজন কম হতে পারে ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য শাক খাওয়ার উপযুক্ত নিয়ম ,গর্ভবতী মায়ের জন্য শাক প্রতিদিনের রুটিনে যোগ করা আবশ্যক। শাক রান্নার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে শাক রান্না করতে হবে। আবার শাক রান্নার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেনো ভালো ভাবে সিদ্ধ হয়।
গর্ভবতী মায়ের জন্য ভিটামিন সি এর উপকারিতা
আমাদের শরীরে ভিটামিন 'সি' জমে থাকে না আবার শরীর থেকে তৈরীও হয় না। অন্য সময় থেকে গর্ভাবস্থায় বেশি ভিটামিন 'সি' প্রয়োজন হয়। শিশুর দাঁত এবং দাঁত এর মাড়ি তৈরীতে ভিটামিন 'সি' প্রয়োজন হয়। মজবুত হাড় গঠনেও ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়।
আমরা সাধারনত মনে করি টক জাতীয় খাবারেই শুধু ভিটামিন সি পাওয়া যায়। টক জাতীয় খাবার ছাড়াও অন্যান্য খাবার থেকেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।ভিটামিন সি যুক্ত খাবার-টমেটো,ফুলকপি,বাধাকপি,করলা,কাকরুল,সবুজ শাক,আমড়া,জাম্বুরা, বরই,কমলা,মালটা,স্টবেরী ইত্যাদি
গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রোটিনের উপকারিতা
গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রোটিন খাওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। মাছ,মাংস এসবে প্রোটিন পাওয়া যায়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এসব খাবারে গন্ধ লাগে বমি বমি ভাব হয়। তখন প্রোটিন খাওয়া আরো কমে যায় ।মাছ মাংস ছাড়াও ডাল প্রোটিনের খুব ভালো একটি উৎস। এজন্য গর্ভাবস্থায় ডাল খেলে প্রোটিন এর চাহিদা পূরন হয়।
সাধারন অবস্থায় কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না,কিন্তু গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়। এখানে ডাল এর গুরুত্ব অপরিসীম। ডালে ফাইবার থাকে আর এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করনে সহায়তা করে।
অনেক সময় লক্ষ্য করা যায়, গর্ভবতী মায়েদের ডাইবেডিস হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। এরকম অবস্থায় ডালে থাকা ফাইবার শরীরের রক্তে সুগারের পরিমান সঠিক মাত্রায় রাখে এবং স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। ফলে,ডাইবেডিস হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। আর রান্নার পরে খাওয়ার জন্য ঘন ডাল টা খাওয়া প্রয়োজন। এতে করে বেশি পরিমান পুষ্টি পাওয়া সম্ভব।
গর্ভবতী মায়ের জন্য বাদাম খাওয়ার বিশেষ উপাকারিতা
বাদাম হলো মিনি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। সব রকমের বাদামেই পুষ্টি রয়েছে। চিনাবাদাম থেকে ফ্লোরিক এসিড এবং কোলিন পাওয়া যায়। যেটি শিশুর ব্রেইন গঠনে সাহায্য করে। নাস্তায় আপনি ১০-১২ টি বাদাম খেতে পারেন তবে পরিমান টা একটু খেয়াল রাখবেন। কারন বাদামের প্রতিটি বীজে অতিরিক্ত ক্যালোরি থাকে। বাদাম বেশি খেলে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
গর্ভবতী মায়ের জন্য আমার নিজের মতামত
আপনি অবশ্যই নিজের ওজনের প্রতি খেয়াল রেখে সকল খাবার সেবন করবেন। সকল খাবারের সঠিক নিয়ম জেনে পরিমান মতো সেবন করবেন। তারপরেও কোনো রকম সমস্যা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার এর পরামর্শ নেবেন।
Teachy Learning এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url